ভালোবাসা যখন গবেষণাগারে কী ধরনের ভালোবাসার অভিজ্ঞতা হবে, তা বড় কথা নয়, ভালোবাসা না থাকার চেয়ে ভালোবাসা থাকা ভালো, তা বড় হিতকরী। এর মূলে রয়েছে রসায়নের খেলা: শরীরের ওপর এর হিতকরী প্রভাব কম নয়। অনুরাগ ও আসক্তি মগজের রসায়নের মূলে নিহিত। তেমন একটি রাসায়নিক হলো এনডোর্ফিন। ১৯৭৫ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই রাসায়নিকটি দেহ প্রতিরোধব্যবস্থা উন্নত করে, ব্যথা উপশম করে, চাপ প্রশমিত করে, বার্ধক্যের প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। এনডোর্ফিন হর্ষোৎফুল্ল করে আমাদের। ব্যায়াম ও শরীরচর্চা আরও উদ্দীপিত করে এনডোর্ফিন নিঃসরণ। এমনকি দূরপাল্লার দৌড়ে এনডোর্ফিনের জন্য ব্যথা ও অবসন্নতা বোধ ঘটে না, বরং দৌড়ের শেষে নিজেকে মনে হয় নমনীয় ও শক্তিমান। যখন ভালোবাসা ও এনডোর্ফিন নিঃসরণ উদ্দীপ্ত করে ভালোবাসার উষ্ণ যন্ত্রণা বরং শক্তি দেয় মানুষকে। এনডোর্ফিন তীব্রতর হয়; আরও রাসায়নিক ক্রমে চড়া হয়ে ওঠে, আসে আমোদ উৎপাদক হরমোন রাসায়নিক ‘ডোপামিন’ ও নরইপিনেফ্রিন, এই নিউরোট্রান্সমিটারটি ইতিবাচক প্রণোদনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ‘রোমাঞ্চকর ধেয়ে আসা’ কারও জন্য হয় হিতকরী, কাউকে করে বড় উদ্দীপ্ত; কেউ কেউ ভালোবাসাতে হয় আসক্ত। সিক্রেটস অব দ্য সুপার ইয়ং বইটি লিখে খ্যাত নিউরোসাইকোলজিস্ট ডেভিড উইকস বলেন, জীবনসঙ্গী যাঁরা ঘন-ভালোবাসা করেন প্রায়শ; তাঁদের আয়ু বেশ বাড়ে। কেবল ঘনিষ্ঠ ভালোবাসা নয়, দৈহিক সংস্পর্শ, নিঃসৃত করে এনডোর্ফিন; যেমন, হরমোন অক্সিটোসিনও। মানুষের মধ্যে বন্ধন স্থাপনে অক্সিটোসিনের ভূমিকা অনন্য। এই দুটো রাসায়নিক প্রাকৃতিক আফিমের মতো কাজ করে; নেশা ধরায় মনে, আসক্তি টানে, সুস্থিত করে রোমান্টিক সম্পর্ক—বলেন ডা. মাইকেল ওডেন্ট। অন্তরঙ্গ স্পর্শ, যেমন, হাতে হাত ধরা, হাত ধরে হাঁটা, প্রেমিকের গালে টোকা দেওয়া—এমন আন্তরিক ভালোবাসা শরীরে রোগ প্রতিরোধ অ্যান্টিবডি বাড়ায়; গ্রোথ হরমোনকে প্রণোদিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল-নার্সারিতে অপরিণত শিশুদের নার্সরা বুকে ধরে গালে টোকা দিলে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ বাড়ে—এই ফলাফল অনেক হাসপাতালকে ‘স্পর্শ করা চর্চা’ চালু করতে উৎসাহিত করেছে, যাতে নিওন্যাটাল নার্সারিতে শিশুরা বেড়ে ওঠে সহজে। বিখ্যাত হূদেরাগ বিজ্ঞানী ডিন অরনিশ লিখেছেন, আমাদের অসুস্থ হওয়া ও ভালো থাকা, আমাদের বিষণ্ন হওয়া, আমাদের সুখী হওয়া—এসব কিছুর মূলে রয়েছে ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা, আমাদের রোগভোগ ও নিরাময় এসবের মূলেও রয়েছে এই দুটো জিনিস। রোগীর হূদ্যন্ত্র ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের ওপর খাদ্য, ধূমপান, বংশগতি ও ব্যায়ামের যেমন প্রভাব, ভালোবাসারও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট অব হার্টম্যাথের গবেষকেরা ইদানীং দেখেছেন, মগজের মতো হূদ্যন্ত্রও ইমোশনের মুখোমুখি হলে উৎপন্ন করে হরমোন। ভালোবাসা, প্রেমের প্রভাবে খুব ছন্দময়, সংগতিপূর্ণ হূৎস্পন্দন ঘটে, অথচ নেতিবাচক ইমোশন জন্ম দেয় এলোমেলো স্পন্দন। জীবনসঙ্গীদের মধ্যে প্রেমঘন ভালোবাসা অনেক রোগ প্রতিরোধ করে, দীর্ঘায়ু করে দম্পতিকে। যাঁদের মা-বাবার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক, তাঁদের হূদেরাগ হয় অনেক কম। দার্শনিক ব্যাখ্যা বাদ দিলেও এর একটি প্রায়োগিক ব্যাখ্যাও আছে। একা জীবনযাপনে অভ্যস্ত যাঁরা, তাঁদের চেয়ে অনেক সুবিধায় থাকেন দম্পতিরা। যেমন, বিবাহিত পুরুষের কথা যদি বলি—স্ত্রীরা সুষম আহার পরিকল্পনা করেন, অনেকে রান্না করেন, চিকিৎসকের কাছে যেতে স্বামীদের উদ্বুদ্ধ করেন এবং জোরও খাটান। বিবাহিত জীবন যেমন—প্রেমঘন, তেমনি নিরাপদ ও রুচিশীলও বটে। মূলকথা যা শাশ্বত; ভালোবাসার শক্তি স্বাস্থ্যকুশল বাড়ায়। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এমন সংকল্প হোক সবার, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, এই সুরে, কাছে দূরে জলে স্থলে সর্বত্র।’
Home » স্বাস্থ্য -চিকিতস্যা » প্রেম -ভালোবাসা কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে আপনি জানেন কি ?
প্রেম -ভালোবাসা কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে আপনি জানেন কি ?
মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ১:৫৩ PM | প্রেম-ভালবাসা | স্বাস্থ্য -চিকিতস্যাভালোবাসা যখন গবেষণাগারে কী ধরনের ভালোবাসার অভিজ্ঞতা হবে, তা বড় কথা নয়, ভালোবাসা না থাকার চেয়ে ভালোবাসা থাকা ভালো, তা বড় হিতকরী। এর মূলে রয়েছে রসায়নের খেলা: শরীরের ওপর এর হিতকরী প্রভাব কম নয়। অনুরাগ ও আসক্তি মগজের রসায়নের মূলে নিহিত। তেমন একটি রাসায়নিক হলো এনডোর্ফিন। ১৯৭৫ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই রাসায়নিকটি দেহ প্রতিরোধব্যবস্থা উন্নত করে, ব্যথা উপশম করে, চাপ প্রশমিত করে, বার্ধক্যের প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। এনডোর্ফিন হর্ষোৎফুল্ল করে আমাদের। ব্যায়াম ও শরীরচর্চা আরও উদ্দীপিত করে এনডোর্ফিন নিঃসরণ। এমনকি দূরপাল্লার দৌড়ে এনডোর্ফিনের জন্য ব্যথা ও অবসন্নতা বোধ ঘটে না, বরং দৌড়ের শেষে নিজেকে মনে হয় নমনীয় ও শক্তিমান। যখন ভালোবাসা ও এনডোর্ফিন নিঃসরণ উদ্দীপ্ত করে ভালোবাসার উষ্ণ যন্ত্রণা বরং শক্তি দেয় মানুষকে। এনডোর্ফিন তীব্রতর হয়; আরও রাসায়নিক ক্রমে চড়া হয়ে ওঠে, আসে আমোদ উৎপাদক হরমোন রাসায়নিক ‘ডোপামিন’ ও নরইপিনেফ্রিন, এই নিউরোট্রান্সমিটারটি ইতিবাচক প্রণোদনার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ‘রোমাঞ্চকর ধেয়ে আসা’ কারও জন্য হয় হিতকরী, কাউকে করে বড় উদ্দীপ্ত; কেউ কেউ ভালোবাসাতে হয় আসক্ত। সিক্রেটস অব দ্য সুপার ইয়ং বইটি লিখে খ্যাত নিউরোসাইকোলজিস্ট ডেভিড উইকস বলেন, জীবনসঙ্গী যাঁরা ঘন-ভালোবাসা করেন প্রায়শ; তাঁদের আয়ু বেশ বাড়ে। কেবল ঘনিষ্ঠ ভালোবাসা নয়, দৈহিক সংস্পর্শ, নিঃসৃত করে এনডোর্ফিন; যেমন, হরমোন অক্সিটোসিনও। মানুষের মধ্যে বন্ধন স্থাপনে অক্সিটোসিনের ভূমিকা অনন্য। এই দুটো রাসায়নিক প্রাকৃতিক আফিমের মতো কাজ করে; নেশা ধরায় মনে, আসক্তি টানে, সুস্থিত করে রোমান্টিক সম্পর্ক—বলেন ডা. মাইকেল ওডেন্ট। অন্তরঙ্গ স্পর্শ, যেমন, হাতে হাত ধরা, হাত ধরে হাঁটা, প্রেমিকের গালে টোকা দেওয়া—এমন আন্তরিক ভালোবাসা শরীরে রোগ প্রতিরোধ অ্যান্টিবডি বাড়ায়; গ্রোথ হরমোনকে প্রণোদিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতাল-নার্সারিতে অপরিণত শিশুদের নার্সরা বুকে ধরে গালে টোকা দিলে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ বাড়ে—এই ফলাফল অনেক হাসপাতালকে ‘স্পর্শ করা চর্চা’ চালু করতে উৎসাহিত করেছে, যাতে নিওন্যাটাল নার্সারিতে শিশুরা বেড়ে ওঠে সহজে। বিখ্যাত হূদেরাগ বিজ্ঞানী ডিন অরনিশ লিখেছেন, আমাদের অসুস্থ হওয়া ও ভালো থাকা, আমাদের বিষণ্ন হওয়া, আমাদের সুখী হওয়া—এসব কিছুর মূলে রয়েছে ভালোবাসা ও অন্তরঙ্গতা, আমাদের রোগভোগ ও নিরাময় এসবের মূলেও রয়েছে এই দুটো জিনিস। রোগীর হূদ্যন্ত্র ও রক্তনালির স্বাস্থ্যের ওপর খাদ্য, ধূমপান, বংশগতি ও ব্যায়ামের যেমন প্রভাব, ভালোবাসারও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট অব হার্টম্যাথের গবেষকেরা ইদানীং দেখেছেন, মগজের মতো হূদ্যন্ত্রও ইমোশনের মুখোমুখি হলে উৎপন্ন করে হরমোন। ভালোবাসা, প্রেমের প্রভাবে খুব ছন্দময়, সংগতিপূর্ণ হূৎস্পন্দন ঘটে, অথচ নেতিবাচক ইমোশন জন্ম দেয় এলোমেলো স্পন্দন। জীবনসঙ্গীদের মধ্যে প্রেমঘন ভালোবাসা অনেক রোগ প্রতিরোধ করে, দীর্ঘায়ু করে দম্পতিকে। যাঁদের মা-বাবার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক, তাঁদের হূদেরাগ হয় অনেক কম। দার্শনিক ব্যাখ্যা বাদ দিলেও এর একটি প্রায়োগিক ব্যাখ্যাও আছে। একা জীবনযাপনে অভ্যস্ত যাঁরা, তাঁদের চেয়ে অনেক সুবিধায় থাকেন দম্পতিরা। যেমন, বিবাহিত পুরুষের কথা যদি বলি—স্ত্রীরা সুষম আহার পরিকল্পনা করেন, অনেকে রান্না করেন, চিকিৎসকের কাছে যেতে স্বামীদের উদ্বুদ্ধ করেন এবং জোরও খাটান। বিবাহিত জীবন যেমন—প্রেমঘন, তেমনি নিরাপদ ও রুচিশীলও বটে। মূলকথা যা শাশ্বত; ভালোবাসার শক্তি স্বাস্থ্যকুশল বাড়ায়। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এমন সংকল্প হোক সবার, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, এই সুরে, কাছে দূরে জলে স্থলে সর্বত্র।’
অনুসন্ধান
এখন সাথে আছেন
বিভাগ
আমাদের খাদ্য
ইন্টারনেট
ইন্টারনেটে আয়
উইন্ডোজ ১০
উইন্ডোজ ৮
উইন্ডোজ এক্সপি
উইন্ডোজ সেভেন
উৎসব
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
কবিতা- সাহিত্য
কেনাকাটা
ক্যারিয়ার
খেলার খবর
টিপস এন্ড ট্রিকস
টিভি
দুর্যোগ
ধর্ম
প্রতিভার খবর
প্রযুক্তির খবর
প্রাণী জগৎ
প্রেম-ভালবাসা
ফটোগ্রাফি
ফেসবুক
বাংলা ছিনেমা
ভ্রমণ
মোবাইল ফোন
রহস্যময় খবর
রেডিও
লাইভ টিভি
লিনাক্স
শিক্ষা
সচেতনতা
সম্পর্ক
সাংস্কৃতিক সংবাদ
সৌরবিদ্যুৎ
স্বাস্থ্য -চিকিতস্যা
হাসপাতালের নাম-ঠিকানা
জনপ্রিয় লেখাগুলো
-
আজকে আমি এমন একটি সাইটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব যেখান থেকে net to mobile এ free call করার সুযোগ আছে।রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই পুরোপুরি ফ্রি আপনার ...
-
গর্ভের সন্তানটি ছেলে হবে না মেয়ে হবে, তা কি আসলে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি? অনেকেরই শখ থাকে তার পরবর্তী সন্তানটি হবে ফুটফুটে একটি মেয়ে অথব...
-
ভালোবাসা সকল মানুষের কাছেই এক বিশাল আলোচিত বিষয়। কিন্তু কি এই ভালোবাসা ? তা কি আমরা একবারও গভীর মনে চিন্তা করে দেখেছি ? করেছি বটে, কিন্ত...
-
আজকে আমি আপনাদের সাথে এমন একটি সফটওয়্যার শেয়ার করতে যাচ্ছি, যা দিয়ে খুব সহজেই আপনার ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ কে ওয়াইফাই হট স্পট এ পরিনত...