পটুয়াখালীতে তৈরি হচ্ছে সাবমেরিন কেবলের দ্বিতীয় ল্যান্ডিং স্টেশন

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৬:০২ PM |

বাংলাদেশে আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পটুয়াখালীতে ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। চলতি বছরের মধ্যে ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।  এই কেবলের মাধ্যমে ১৪০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিক হবে ১৭টি দেশ। বাংলাদেশও এই কেবলের মালিকানার অংশীদার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযুক্ত হলে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১ হাজার ৪শ’ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাবে। দেশে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ রেখে বাকি ব্যান্ডউইথ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কাছে বিক্রি করা হবে। কারণ এই মূল্যবান সম্পদ দেশে ফেলে রেখে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে দেশকে বঞ্চিত করা হবে না।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে ২শ’ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথসহ সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত আছে বাংলাদেশ। এই ব্যান্ডউইথ থেকে মাত্র ৪০ গিগাবাইট ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও কিছু জটিলতায় তা পিছিয়ে যাবে। ১৭ দেশের কনসোর্টিয়ামের কিছু দেশ অন্য একটি সাবমেরিন কেবলে (এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপ-১ বা এএই-১) যাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে বলে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত মার্চে মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই-৪’ এর অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ ভারতের টাটা কমিউনিকেশনের কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টাটা বাংলাদেশ থেকে এক শ’ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ কিনে নেবে। সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-৪ ছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে ছয়টি বিকল্প সাবমেরিন কেবল (আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল) সংযুক্ত রয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনে মোট খরচ হবে সাত কোটি ডলার, এর মধ্যে চার কোটি মার্কিন ডলার আইডিবির ঋণ দেয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারের কোন অর্থ ব্যয় হবে না। এ জন্য বাকি তিন কোটি মার্কিন ডলার সাবমেরিন কেবল কোম্পানিকে যোগাড় করতে হচ্ছে। সাবমেরিন কেবল সি-মি-উই-৪ এর অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে যে টাকা আসবে তা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনে সরবরাহ করা হবে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথম সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়।
একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-উই-৫ সাবমেরিন কেবলে দক্ষিণ-এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৭ দেশ সংযুক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। সি-মি-উই-৫ কেবলের মালিক হবে ১৭ দেশ। সি-মি-উই-৪ কেবলের মালিক যে সব দেশ, এই কেবলের মালিকও তারাই। তবে সি-মি-উই-৪ কেবলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২০ হাজার কিলোমিটার আর সি-মি-উই-৫ কেবলের দৈর্ঘ্য হবে ২৫ হাজার কিলোমিটার। এই সাবমেরিন কেবল স্থাপনের জন্য একটি কনসোর্টিয়াম করা হয়েছে। কনসোর্টিয়ামে বাংলাদেশও সদস্য দেশ।
বাংলাদেশ অংশে গভীর সমুদ্রের তলদেশে কেবল স্থাপনের জন্য দুটি কোম্পানিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। কোম্পানি দুটি বাংলাদেশকে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটে সংযুক্ত রাখতে বিকল্প আরেকটি পথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইউরোপীয় অঞ্চলের সমুদ্র তলদেশ দিয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল স্থাপন করবে। বর্তমানে সি-মি-উই-৪ কেবল সংযোগে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে সি-মি-উই-৫ সংযোগ দিয়ে বহাল থাকবে দেশের ইন্টারনেট সংযোগ। এর ফলে গতি বাড়বে দেশের ইন্টারনেট নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ে।
বাংলাদেশ সি-মি-উই-৫ নামে আরেকটি সাবমেরিন কেবল স্থাপনে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) কাছ থেকে উচ্চ সুদে বিরাট অঙ্কের টাকা ঋণ প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। সি-মি-উই-৪ কেবল স্থাপনের সময়ও আইডিবির কাছ থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা সুদে আনা হয়েছিল। সেই টাকা পরিশোধ হওয়ার পরই আবার ঋণ প্রস্তাব করেছে বিএসসিসিএল। আবার নতুন করে টাকা এনে সি-মি-উই-৫ কেবলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এ বছরের জুনের মধ্যে সি-মি-উই-৪ কেবলের আপগ্রেডেশন কাজ শেষ হয়ে গেলে ১১৬ দশমিক ৬ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ দেশে আসবে।
বিএসসিসিএলের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন এই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ রেখে বাকিটা বিক্রির প্রস্তাব করা হয়েছে। ভারতের টাটা কমিউনিকেশনের কাছে এক শ’ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ বিক্রির চুক্তি হয়েছে। এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন হবে। বিকল্প পথে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ আনার জন্য সি-মি-উই-৫ নামের নতুন কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সি-মি-উই-৪ এর (সাউথ এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) কেবলের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এর মালিক হচ্ছে ১৬ দেশ। দেশগুলো হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজিরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ নতুন কনসোর্টিয়ামটি গঠিত হবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েক দেশ নিয়ে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ৩৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে ১৬ দেশের সাবমেরিন কেবল কনসোর্টিয়াম (জোট) সাউথ এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-ফোরের (সি-মি-উই-৪) সঙ্গে একটি মাত্র সাবমেরিন কেবল দিয়ে যুক্ত হয় বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ ভাড়া নিতে ভুটানের পর আবেদন জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। এর আগে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ব্যান্ডউইথ ভাড়া নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রস্তাব বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। কী পরিমাণ ব্যান্ডউইথ ভাড়া দেয়া হবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এখনও। তবে এ সব দেশে ব্যান্ডউইথ ভাড়া দিতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.