ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশে কেন উন্মাদনা?

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৬:২২ PM |
 
আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের পতাকার মাঝে বাংলাদেশের পতাকা ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আগামীকাল। সারা বিশ্বে এই আয়োজনকে ঘিরে যেমন উত্তেজনা আর উদ্দীপনা, তেমনি উন্মাদনা এখন বাংলাদেশেও চরমে উঠছে। বিশ্বকাপে ৩২টি দেশ অংশ নিলেও এই মওসুমে লাখ লাখ সমর্থক ভাগ হয়ে যায় মূলত দুটো শিবিরে - আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। বাড়িঘরের ছাদ ছেয়ে যায় নীল-সাদা আর সবুজ- হলুদ পতাকায়। ফুটবল আড্ডায় ভক্তরা এই দুটো দলের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করেন । বিশ্বকাপে অন্যান্য দেশের সাফল্য ও সম্ভাবনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই দুটো দেশকে নিয়ে এই উন্মাদনার কারণ কি? রাজধানী ঢাকায় রিকশা চালান আবু সাইদ। তার রিকশার সামনে আর্জেন্টিনার একটি ছোট পতাকা। দিনে ১২ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে মধ্যরাতে আর্জেন্টিনার সব কটি খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। " আমি শুধু আর্জেন্টিনার খেলা দেখি, এবারে রাতে খেলা হওয়াতে ভাল হয়েছে। দিনে রিক্সা চালাবো রাতে খেলা দেখবো। ১০ টাকা দিয়ে এই পতাকাটা কিনেছি কারণ এতে আমার খুব আনন্দ হয়েছে-লাখ টাকার আনন্দ" বলছিলেন আবু সাইদ। রিকশাচালক আবু সাইদের মত ফুটবল বিশ্বকাপের ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। স্কুল,কলেজ ,বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, চায়ের দোকান সবখানে চলছে ফুটবল নিয়ে আলোচনা,তর্ক –বিতর্ক। কারওয়ানবাজারের একটি চায়ের দোকানে চলছে প্রিয় দলকে নিয়ে আলোচনার ঝড়। সেখানে তারা দুটি দলে ভাগ হয়েছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে। প্রত্যেকেই তার প্রিয় দলের ভাল দিক আর বিশ্বকাপে ভাল খেলার নানা সম্ভাবনার কথা বলছে। কখনো কখনো সে তর্ক গড়াচ্ছে বাকযুদ্ধে। সেখানে একজন বলছেন "ব্রাজিল মেরে খেলে, ব্রাজিলের খেলা বাজে খেলা, আর্জেন্টিনার খেলা ফাইন খেলা"। তার কথার জবাবে ব্রাজিলের এক সর্মথক বললেন "সুন্দর ফুটবল খেলা বলতে যেটা বোঝায় সেটা ব্রাজিল খেলে। টিমওয়াইজ ধরেন ব্রাজিল একটা দুর্দান্ত দল। নেইমার আছে, অস্কার আছে"। আরেকজন আর্জেন্টিনার সর্মথক একধাপ এগিয়ে মেসির পা-কে পাঠিয়ে দিতে চান যাদুঘরে। তিনি বলছিলেন " মেসি-তিনি এত ছন্নবিছিন্ন খেলা দেখান, এত অপূর্ব লাগে! সে যদি মারা যায় তার পা যাদু ঘরে রাখা উচিত"। ব্রাজির আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে শুধু কথার যুদ্ধই নয়, সর্মথকদের মধ্যে চলে প্রিয় দলকে এগিয়ে রাখার সব রকম চেষ্টা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন শামসুল হক বলছিলেন " আমার এক কলিগ আর্জেন্টিনার পতাকা কিনেছে আমি তার চেয়ে বড় ব্রাজিলের পতাকা কিনেছে ঐ পতাকাটা ঢেকে দেওয়ার জন্য"। বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চলছে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন। গাবতলির একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে গাবতলি ট্রাক টার্মিনালে আয়োজন করেছেন বড় পর্দায় খেলা দেখার। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম মিয়ে তার দোকানের পাশে ফাকা জায়গাটা দেখিয়ে বলছিলেন এখানেই তিনি আয়োজন করবেন খেলা দেখার। "আমার দেশের বাড়িতে একটা প্রজেক্টর ছিল, আমি নিয়ে আসছি। আমার দোকানের পাশে খালি জায়গা আছে সেখানে খেলা দেখাবো"। বিশ্বকাপ ফুটবলে বাংলাদেশ অংশ না নিলেও প্রতিবছর বিশ্বকাপকে ঘিরে মানুষের মধ্যে এই উন্মাদনা দেখা দেয়। বিশেষ করে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায় ভক্ত সর্মথকরা। কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকার এই দুটি দেশকে নিয়ে তাদের মধ্যে এ উন্মাদনা কেন? বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সার যিনি এর আগে ৮টি বিশ্বকাপের খেলা দেখেছেন তিনি বলছিলেন বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বকাপের সাথে পরিচয় হয় ১৯৮২ সালে কিন্তু তাদের মধ্যে এই উন্মাদনা তৈরি হয় ৮৬র বিশ্বকাপ থেকে। তবে গত দুই তিনটি বিশ্বকাপ থেকে মানুষের উচ্ছ্বাস বেড়েছে চোখে পরার মত। মি. কায়সার বলছিলেন "৮২ বিশ্বকাপের খেলা টেলিভিশনে দেখানো হয়, তখন থেকে মানুষের পরিচয় হয় বিশ্বকাপের সাথে। তবে ৮৬ বিশ্বকাপের ম্যারাডোনার জন্য মানুষের মনে আরও আগ্রহ বাড়ে। লোকজন তখন ম্যারডোনার জার্সি কিনতো। বাংলাদেশের ফুটবলাররা ম্যারাডোনার মত হতে চাইতো। মূলত মানুষ আর্জেন্টিনার সর্মথন দেওয়া শুরু করে ম্যারাডোনার জন্য। আর ব্রাজিলের বিশ্বকাপ সংখ্যা এবং খেলার নৈপুন্য মানুষকে আকৃষ্ট করছে বছরের পর বছর ধরে" তিনি আরো বলেন "এটা ঠিক টেলিভিশন এখন ঘরে ঘরে গ্রামে গঞ্জে সব জায়গায়। আর সবাই তো মাঠে যেয়ে খেলা দেখতে পারে না। তারা টেলিভিশনে প্রিয় দলের খেলা দেখে, বাসা বাড়িতে পতাকা উড়াচ্ছে, জার্সি পড়ছে এটা গত দুই তিনি বিশ্বকাপ থেকে বেশি হচ্ছে"। শুধু ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা নয়, ফেভারিটের কাতারে রয়েছে স্পেন, পর্তুগাল, ইটালি ও জার্মানি। আর পছন্দের এসব দল খেলায় জিতলে কে কিভাবে আনন্দ উৎযাপন করবে সেসব এখন থেকেই ঠিক করা আছে তাদের। আর্জেন্টিনার সর্মথক একজন বলছেন "আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠলে গরু কুরবানি করে খাওয়া হবে ৭০ হাজার টাকা বাজেট ধরা হয়েছে"। আর ব্রাজিল দলের সর্মথক বলছেন "ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে শুরু হবে খাওয়া দাওয়া, যত বড় ধাপে যাবে তত বড় আয়োজন"। ২০১৪ বিশ্বকাপের জন্য নির্ধারিত দেশ ব্রাজিলের সাথে সময়ের ব্যবধানে কারণে বাংলাদেশের খেলাগুলো দেখা যাবে মধ্যরাত ও ভোররাতে। তবে রাত জেগে খেলা দেখাকে বিড়ম্বনা মনে না করে আগামী একমাসের জন্য মানুষ নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন 'গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ' উপভোগ করার জন্য।
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.