বাংলাদেশের মানুষের চলাচলের অন্যতম বাহন হলো রিকশা। প্রযুক্তির কল্যাণে বদলে যাচ্ছে এ রিকশার ধরণ। রিকশাচালকদের সুবিধা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশি দুই গবেষক সরকারি অনুদানে উদ্ভাবন করেছেন মাইক্রোকন্ট্রোলার সিস্টেমের সৌরশক্তিচালিত রিকশা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়ছার ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রভাষক আবু রায়হান সিদ্দিক তৈরি করেছেন মাইক্রোকন্ট্রোলার সিস্টেমের সৌরশক্তিচালিত এ রিকশা। এ রিকশায় শক্তি সরবরাহ করবে দুটি সৌর প্যানেল। এগুলো থাকবে রিকশার হুডের ওপর। সূর্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করে প্যালেন দুটি সে শক্তি সরবরাহ করবে ব্যাটারিতে। এ শক্তি রিকশা চালাতে সহযোগিতা করবে।
ড. এম শামীম কায়সার বলেন, ''আমাদের দেশে গরমে গড়ে ৮.০৩ পরিমাণ সৌরশক্তি থাকে আর শীতকালে ৫.০৫। সারা বছরের হিসাবে আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪৬.০৮ সৌরশক্তি পেয়ে থাকি। প্রাকৃতিক এ শক্তি কাজে লাগিয়ে রিকশা চালাতে পারলে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।''
অন্যদিকে আবু রায়হান জানান, মাইক্রোকন্ট্রোলারের মাধ্যমে মোটরের এনার্জি ইনপুট নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাটারি চার্জের স্থায়িত্ব আরও বাড়ানো সম্ভব। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে ব্যাটারির কার্যকারিতা ও সময় অনেকখানি বেড়ে যাবে। একটি নির্দিষ্ট গতি ওঠার পর ব্যাটারি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে আবার গতি স্বাভাবিকে ফিরে এলে ব্যাটারি বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করবে।
তিনি আরো বলেন, যখন রিকশায় যাত্রী থাকেন না, তখন এ মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করা যাবে। ফলে স্বয়ংক্রীয়ভাবে মোটর থেকে ব্যাটারিতে শক্তি সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এতে রিকশার গতি কমে যাবে, আর সৌরশক্তি ঠিকই সঞ্চিত থাকবে। শক্তি সরবরাহ কখন চালু বা বন্ধ হচ্ছে, চালক সেটি বুঝতেও পারবেন না। এছাড়া মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে রিকশার একটি নির্দিষ্ট গতিও নির্ধারণ করে দেয়া যাবে। এতে চালক ইচ্ছা করলেও বেশি গতি তুলতে পারবেন না। তখন হয়তো টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা রিকসা চালানো যাবে।
আবু রায়হান বলেন, ''বর্তমানে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে সাধারণত ৪৮ ভোল্ট শক্তি লাগে। আমাদের উদ্ভাবিত রিকশায় দুটি সোলার প্যানেল ২৪ ভোল্ট শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। এ ২৪ ভোল্ট শক্তিকে ৪৮ ভোল্ট শক্তিতে রূপান্তর করার জন্য একটি কনভার্টার ব্যবহার করা হয়েছে, যা ২৪ ভোল্টকে ৪৮ ভোল্টে রূপান্তরিত করে।'' তবে গবেষণার মাধ্যমে এর কার্যকারিতা আরও বাড়ানো সম্ভব বলেও জানান রায়হান।
ড. শামীম কায়ছার জানান, প্রকল্পটির জন্য আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আর্থিক সহযোগিতা পেলেই গাড়িটি তৈরি করে ফেলব।
তিনি আরো জানান, এই রিকশাটি প্রাথমিকভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলাচল করবে। তবে সফলতা পেলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি করে মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে এটি তুলে দেওয়া হবে।