একটি সম্পর্ক থাকা অবস্থায় আরেকটি সম্পর্কে‌ জড়িয়ে পড়ছেন?

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৯:৩১ AM |
তন্ময় আর সাথীর পরিচয়টা ভার্সি‌টির প্রথম দিন থেকেই। প্রথম ক্লাসে আসতেই সাথীর কিছুটা দেরি হয়েছিল। ক্লাস শেষে সাথী তন্ময়ের কাছে জানতে চাইল স্যারের নাম থেকে শুরু করে ক্লাসের যাবতীয় তথ্য। তন্ময়ও বেশ সুন্দরভবে ভদ্র ছেলের মতো উত্তর দিয়ে গেল। পরের দিন আকস্মিকভাবে হোক আর যেভাবেই হোক পাশাপাশি দুটি কলামে বসল ওরা। ক্লাসের মধ্যে বেশ চোখাচোখিও হচ্ছিল ওদের। ক্লাস লেকচার কিছুই মাথায় ঢুকছে না সাথীর। ও মগ্ন হয়ে ভাবছে তন্ময়ের কখা। ছেলেটা বেশ ভদ্র, খুব সুন্দর করে কখা বলে কিন্ত নিজে থেকে একদমই কথা বলে না ও। সাথীর বেশ আগ্রহ তৈরী হলো আর এজন্যেই নিজে থেকে ফোন নম্বর নিয়ে রোজ ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিত তন্ময়ের। এভাবেই বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো ওরা। এরই মাঝে সাথীর ফোন তন্ময়ের কাছে একধরনের অক্সিজেন হয়ে দাড়ালো। তন্ময় এবার নিজে থেকেই ভালোবাসার কথা জানালো সাথীকে।সেই থেকে শুরু। অদ্ভুত সুন্দর কিছু সময় কাটছিল ওদের। বেশ একটা বন্ধুদের গ্রুপ ও তৈরী হয়েছে ওদের। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই তন্ময়ের এই তীব্র ভালোবাসা সাথীর কাছে একঘেয়ে লাগতে থাকল। যেই ব্যক্তিত্ব সাথীকে আকর্ষ‌ন করেছিল আজ সেটাই অসহ্য হয়ে উঠেছে ওর কাছে। তন্ময় যেন সাথীর সবকিছুই মেনে নেয়। সাথী চাইত একটু মিষ্টি ঝগড়া করতে কিন্তু সেটারও সুযোগ নেই। তবুও চলে যাচ্ছিল ওদের দিন কোনভাবে। এরই মধ্যে তন্ময়ের কিছু বন্ধু এলো ওদের ভার্সি‌টিতে আড্ডা দিতে। বেশ কথা পটু সেজান তো সবার সামনেই তন্ময়কে বলেই বসলো- দোস্ত, তোর তো কপাল যে দারুণ একটা প্রেমিকা পেয়েছিস। ভাবি, ডু ইউ নো ইউ আর সো প্রিটি! সাথীর বেশ ভালোই লাগলো এতোগুলো মানুষের সামনে সেজান কি সুন্দরভাবে ওকে প্রশংসা করলো যা তন্ময় কখনোই করেনি ওকে। সেদিন রাতেই তন্ময়ের প্রোফাইল ঘেটে সাথীকে রিকুয়েস্ট পাঠালো সেজান। সারা রাত চ্যাট হলো দু'জনের। ধীরে ধীরে দুর্ব‌ল হয়ে পড়লো সাথী সেজানের প্রতি। তন্ময়কে এখন এড়িয়ে সেজানকেই সময় দিচ্ছে ও। নিজেই দ্বিধায় ভুগছে প্রতিদিন। কাকে ভলোবাসে সাথী? তন্ময়ের সাথে কি প্রতারনা হয়ে যাচ্ছে না ? বর্ত‌মানে এরকম সমস্যাটি খুবই কমন হয়ে উঠেছে। সম্পর্ক‌ থাকা অবস্থায় ছেলে কিংবা মেয়ে অন্য সম্পর্কে‌ জড়িয়ে পড়ছে। কী করা উচিত এমন সময়? কেন বাড়ছে এসকল ঘটনা? এ নিয়েই কথা বললাম এ প্রজন্মের কিছু ছেলে মেয়ের সাথে। চলুন দেখা যাক কী ভাবছেন তারা। আমেরিকান ইন্টারনেশনাল ইউনিভাসিটির ছাত্র অরিন বললেন- “আমার মনে হয় মেয়েটি দু’জনের কাউকে ভালোবাসে না। সত্যি কাউকে ভালোবাসলে এভাবে আরেকজনের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। মেয়েটির মধ্যে একধরনের ভালোলাগার মোহ কাজ করছে। তার জীবনে এভাবে আরও ছেলে আসতে পারে। বর্ত‌মানে প্রকৃত ভালোবাসা খুজে পাওয়া কঠিন। সময় কাটানোর জন্যেই সবাই প্রেম করে থাকে আর এজন্য এসব ঘটনা অহরহ হচ্ছে।“ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সায়মন অবশ্য বললেন ভিন্ন কথা। তার মতে “ভালোবাসা যেহেতু মনের ব্যাপার তাই এর উপর জোরের কিছু নেই। যেহেতু তন্ময় মেয়েটির চাহিদা পূরন করতে পারেনি তাই সে সেজানের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় মেয়েটি তার মনের কথা বলে তন্ময়কে একটি সুযোগ দিতে পারে আর সেটা নাহলে সেজানের কাছে চলে যাওয়াই সঠিক সিন্ধান্ত হবে।“ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুস্মিতা বললেন “বর্ত‌মান সময়ে এরকম সমস্যাটি অনেক দেখা যাচ্ছে। আমার কিছু কাছের বন্ধুদের সাথেই এরকম হয়েছে। যেহেতু মেয়েটি তার পুরনো ভালাবাসার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, তাই জোর করে টিকিয়ে রাখার কিছু নেই। তন্ময়কে জানিয়ে সেজানের কাছে চলে আসাই বেটার। এবং এটি দ্রুত করা উচিত নাহলে তন্ময়ের সাথে চিট করা হবে। আর আমার মতে বর্ত‌মানে সুযোগ অনেক বেশী। তাই তুলনা জিনিসটাও করা যায় বেশী। বেটার অপশন চাইলেই পেতে পারে মানুষ আর এজন্য একটি সম্পর্কে‌ স্থায়ী হচ্ছে না কেউ।“ অন্যদিকে আমেরিকান ইন্টারনেশনাল ইউনিভাসিটির ছাত্র রাশেদ বললেন” আমার মনে হয় মেয়েটির প্রথম ভালোবাসার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান থাকলে সে সেজানের প্রতি ভালোবাসার সুযোগই দিত না। একটি সম্পর্ক‌ থাকা অবস্থায় অন্য কাউকে ভালোলাগার সুযোগ দেওয়াটা কখনই উচিত নয়। এখন মেয়েটিকেই নিজেকে প্রশ্ন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কারণ তার জীবনে এভাবে আরও ছেলে আসতে পারে। প্রথমে বোঝা উচিত কোনটি ভালোলাগা আর কোনটি ভালোবাসা।“ ইডেন কলেজে পড়ুয়া নিশির কথা কিন্তু ভিন্ন। নিজের জীবনের কথা বললেন তিনি। “ আমার নিজের জীবনেই ঘটেছে এরকম ঘটনা। একটি সম্পর্কে‌ থাকা অবস্থায় আমি জড়িয়ে পড়েছিলাম আরেকটি সম্পর্কে। সেই সম্পকটিও আমার বেশীদিন টেকেনি। পরবর্তী‌তে আমি খুঁজে পেয়েছি আমার সোল মেট এবং তার সাথে আমি বেশ ভালো আছি এখন। আশা করছি সারাজীবন একসাথে থাকবো।" নিশি বললেন, "এরকম হতেই পারে কখন যে আপনি কাকে ভালোবেসে মন দিয়ে ফেলবেন আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না। তবে সেটা জানিয়ে দেওয়াই ভালো। কোনরকম প্রতারনায় আমি বিশ্বাসী নই।”
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.