একটা
সময়ে আমাদের রক্ষণশীল দেশে প্রেম করে বিয়ে করার ব্যাপারটাই ছিলো
অস্বাভাবিক। কিন্তু এখন সমাজ এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দুই ই পাল্টে গেছে।
বর্তমান আধুনিক সময়ে বেশিরভাগ মানুষই প্রেম করে বিয়ে করতে চায়। এমনকি
ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে প্রেম করেনি, এমন কারো ব্যাপারে আমাদের অনুভূতি
হয়ে থাকে সহানুভূতি থেকে শুরু করে তাচ্ছিল্য পর্যন্ত। কারণ তাদের সবারই
বিশ্বাস, শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্যই বিয়ে করা উচিত। কিন্তু আসলে কি তাই?
বাস্তবতা
এতো সহজ নয়। যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি, প্রেম একটি
বিলাসিতা বই কিছু নয়। মানুষ তখনই প্রেম করে বিয়ে করে যখন তার জীবনের অন্য
সব চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। এ কারণেই বিয়ের পরে কোনো রকম সমস্যা দেখা গেলেই
প্রেমের মাঝে ভাঁটা পড়ে, আর অনেক সময়েই দেখা যায় বিবাহবিচ্ছেদ। আধুনিক সময়ে
মানুষ সংসার টিকিয়ে রাখার চাইতে নিজের ব্যক্তিগত সুখের কথা চিন্তা করে এবং
সে কারণেও প্রেমের মোহ কেটে গেলে সঙ্গীকে ছেড়ে যাওয়াটাও সহজ হয়ে গেছে।
প্রাচীন
কাল থেকে মানুষ সন্তান উৎপাদনের জন্য বিয়ে করতো, এমনকি কয়েক দশক আগেও
মানুষ বিয়ে করতো সম্পত্তি এবং রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু এখন সেটা কমই হতে
দেখা যায়। ভালোবাসাকে আমরা এখন এতো বেশি মূল্য দেই যে তার সামনে পরিবারের
মূল্য ফিকে হয়ে গেছে আমাদের কাছে। কিন্তু বিয়ে করার পেছনে কিন্তু থাকতে
পারে অযৌক্তিক প্রেমের চাইতে আরও ভালো কোনো কারণ। আপনি সে মানুষটিকে বিয়ে
করতে পারেন যে আপনার পাশাপাশি আপনার সন্তানের একটি ভালো অভিভাবক হতে
পারবেন, যাকে বিয়ে করলে উভয়েই আর্থিকভাবে সছল হতে পারবেন, এমনকি শুধুমাত্র
শান্তিপূর্ণ একটি পরিবার গড়ে তোলার জন্য যে মানুষটির সাথে আপনার বন্ধুত্ব
ভালো আছে অথবা রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্বাস, তাকেও বিয়ে করতে পারেন। এসব
কারণে বিয়ে করাটা যথেষ্টই বাস্তবধর্মী।
প্রেম
করে বিয়ে করলেই যে তা হবে ঠুনকো, গড়াবে বিচ্ছেদের দিকে- এমনটা কিন্তু বলা
হচ্ছে না মোটেই। তবে বিয়ে করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য প্রেম না হয়ে অন্য কিছু
হতেই পারে। শুধুমাত্র ভালোবাসার কথা চিন্তা করে বিয়ে করাটা কেন ঠিক নয়,
দেখে নিন সেই কারণগুলো:
১) প্রেম কোনো চিরস্থায়ী অনুভূতি নয়
অনেকের
জন্যই প্রেম বজ্রপাতের মতো। ঝট করে কোনো মানুষকে ভালো লেগে যায়, তারপর
প্রেমে রূপ নেয় সেই অনুভূতিটি। কিন্তু এই অনুভূতিটি যত দ্রুত আসে, তত
দ্রুতই কিন্তু চলেও যেতে পারে। প্রেম করে বিয়ে করার পর একটা সময়ে যদি সেই
প্রেম উবে যায়, তখন কি হবে? সম্পর্কটি হয় বিষিয়ে যায় অথবা একেবারেই শেষ হয়ে
যায়। প্রেমের কারণেই যদি বিয়ে করা হয়ে থাকে, তবে সেই বিবাহিত জীবনে আর
কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
২) বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রেম যথেষ্ট শক্তিশালী ভিত্তি নয়
কেন
আপনি একজন মানুষকে সারা জীবন নিজের পাশে রাখবেন? কেন তার জন্য নিজের জীবন
পরিবর্তন করে ফেলবেন? এর পেছনে তো থাকা চাই খুব শক্তিশালী এবং স্থায়ী একটি
কারণ। সত্যি কথা বলতে কি, প্রেম শক্তিশালী হলেও তা খুব বেশি স্থায়ী হয় না।
বিশেষ করে যে সংসারে সন্তান রয়েছে এক বা একাধিক, সেখানে থাকা চাই আরও
দীর্ঘমেয়াদি কোনো ভিত্তি। তা হতে পারে শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস এমনকি
আর্থিক বা সামাজিক মর্যাদা। শুধুই প্রেমের ওপর ভিত্তি করে গড়া যে কোনো
কাঠামো এক সময় না এক সময় ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
৩) শুধু প্রেম দিয়ে জীবন চলে না
খারাপ
লাগলেও কথা সত্যি। একটা মানুষের সাথে সারা জীবন কাটিয়ে দেবার জন্য প্রেম
ছাড়াও অনেক কিছুই দরকার হয়। আপনার মনে যদি তার ওপরে যথেষ্ট আস্থা না থাকে,
তবে কিছুদিন পরেই সেই সম্পর্কে নানান সমস্যা দেখা দিতে বাধ্য। আপনি যদি মনে
করে থাকেন শুধুই প্রেম দিয়ে সাড়া জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন, একে অপরকে সহ্য
করতে পারবেন তবে সেটা অনেক বড় ভুল। সুস্থ এবং শক্তিশালী একটি দীর্ঘস্থায়ী
সম্পর্ক যদি গড়ে তোলার ইচ্ছে থাকে আপনার, তবে তার রেসিপি হতে পারে এমন: ১
কাপ শ্রদ্ধা, ১ কাপ মিলিত লক্ষ্য, ১ কাপ মনের মিল, ১ চা চামচ ভালোবাসা এবং ১
চা চামচ আকর্ষণ (ইচ্ছে হলে!)।