গ্রাহক সেবার মান, কল ড্রপ, প্যাকেজ সিস্টেম, সিম রেজিস্ট্রেশন, অবৈধ ভিওআইপি ও পালস সেবার মান নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা কোনো ধরনের অনিয়ম করছে কিনা তা দেখতে প্রতি ৬ মাস পর পর অপারেটরদের কার্যক্রম জরিপ করবে বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসি। জরিপে কোনো অপারেটরের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে একটি জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছে তারা। এর ফলাফল নিয়ে তারা এখন বিচার-বিশ্লেষণও শুরু করেছেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটররা এক জোট হয়ে বিটিআরসির এই জরিপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলেছে, কোনো ধরনের ক্রাইটেরিয়া ও নিয়ম-কানুন পালন না করে বিটিআরসি গোপনে এ ধরনের একটি জরিপ করে মোবাইল ফোন অপারেটর সম্পর্কে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এ অবস্থায় মোবাইল অপারেটররা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, তাদের প্রথম জরিপে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহক সেবার মান অন্য সব অপারেটরের চেয়ে খারাপ বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে। কল ড্রপ, সাক্সেস রেট এবং সেবার গুণগত মানের বিচারেও (কোয়ালিটি অব সার্ভিস) খারাপ অবস্থান ওই অপারেটরের।
জরিপে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আয় করলেও গ্রাহকের সেবার মান সেভাবে বাড়েনি। বরং কোম্পানিটি নানা কৌশলে গ্রাহককে ঠকাচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি শাহবাগ, ফার্মগেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট এবং পান্থপথে সেবার মানের মাঠ পর্যায়ের চিত্র পেতে ভয়েস ডাটা কালেক্টিং মেশিন বসিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করে বিটিআরসি।
প্রথম দিকে উন্নত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল সুবিধা পৌঁছে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ গ্রাহকের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করে আসছে। তবে বিটিআরসির জরিপে দেখা গেছে গ্রাহক সেবায় এই কোম্পানিটি তুলনামূলক পিছিয়ে আছে অন্য কোম্পানিগুলোর তুলনায়। বিটিআরসির জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণফোনের কল সাক্সেস রেট ৯১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বেসরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বনিু। এছাড়া কল ড্রপের ক্ষেত্রেও শীর্ষে অবস্থান করছে গ্রামীণফোন। এই প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্কে কল ড্রপের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে গ্রামীণফোনের একটি সূত্র জানায়, তারা প্রতি মাসে এ ধরনের জরিপ কাজ করে থাকে। তাদের জরিপের ফলাফল সব সময়ই গ্রাহকবান্ধব এবং সাক্সেস রেটিং বিশ্বের ভালো মোবাইল ফোন অপারেটরদের মতো মানসম্পন্ন। তবে বিটিআরসির জরিপ নিয়ে ওই কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিটিআরসির জরিপে আরও জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের কল সাকসেসের হার ৮১ দশমিক ১৩ শতাংশ। একইভাবে কল সাক্সেস রেটেও বেসরকারি অপারেটরগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের অবস্থান সবার নিচে। তাদের কল সাক্সেস রেট ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা বাংলালিংকের ক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ১১ এবং রবির ক্ষেত্রে ৯১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এয়ারটেলের কল সাক্সেস রেট ৯৭ দশমিক ২২ এবং টেলিটকের ৮১ দশমিক ১৩। জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত কোয়ালিটি অব সার্ভিসের নীতিমালা অনুসারে ন্যূনতম কল সাক্সেস রেট হওয়ার কথা ৯৫ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে সেটি ৯৭ শতাংশে উন্নীত করারও কথা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ অপারেটরের ক্ষেত্রে এ ন্যূনতম মাত্রাও পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। তবে জরিপ প্রতিবেদনে সেবার দুটি ক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে পুরনো মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, মোবাইল সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রথম দুই বছরে কল সেটআপ রেট ৯৫ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে এই হার অবশ্যই ৯৭ শতাংশ হওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি কল ড্রপের হার কোনো মতেই ৩ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটকসহ দেশে বর্তমানে ছয়টি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশজুড়ে এগুলোয় প্রায় ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক রয়েছেন।