চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি, সরকার বিপাকে

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৩:৪৯ PM |
আগামীকাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টা হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখবেন সারা দেশের চিকিৎসকরা। কর্মবিরতির নামে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। গতকাল সোমবার সংগঠনটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে দৈনিক কালের কণ্ঠ। জনভোগান্তির এসব কর্মসূচিতে বিএমএর সঙ্গে রয়েছে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদও (স্বাচিপ)। কেননা এই দুই সংগঠনের নেতৃস্থানীয় একাধিক পদে রয়েছেন একই ব্যক্তি। তবে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এতে শামিল হবে কি না তা গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলেও এখনও এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন একটা উন্নয়ন ঘটেনি। বাংলাদেশে দারিদ্রতার কারনে অনেকেই প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে যেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তাদের শেষ ভরসা সরকারি হাসপাতালগুলো। বছরে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর আউটডোর থেকে চিকিৎসা নেয়। ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় আরো প্রায় ৪৬ লাখ রোগী। প্রতিদিন প্রাইভেট চেম্বারেও কয়েক হাজার মানুষ প্রতি ঘণ্টায় চিকিৎসাসেবা পায়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই তথ্যই বলে দেয় সারা দেশের কী বিপুলসংখ্যক মানুষ সেবার জন্য চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু বর্তমানে শুরু হয়েছে মৌলিক অধিকার চিকিৎসা নিয়ে নেতিবাচক রাজনীতির খেলা। চলছে চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি। উঠেছে, সাধারণ চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ানোর নামে সারা দেশের লাখ লাখ রোগীকে চিকিৎসাবঞ্চিত করার মতো কর্মসূচি দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতি। বিএমএ ও স্বাচিপকে চাঙ্গা করে তুলতে বিশেষত স্বাচিপের আসন্ন কাউন্সিলকে ঘিরে তরুণ শিক্ষানবিশ বা অনারারি চিকিৎসকদের আরো উসকে দেওয়া হচ্ছে। বিপাকে ফেলা হচ্ছে সরকারকে। কর্মবিরতি বা ধর্মঘটের নামে রোগীদের চিকিৎসা-বঞ্চিত না করতে সরকারের তরফ থেকে বারবার সহায়তা চাওয়া হচ্ছে চিকিৎসক সংগঠনের নেতাদের প্রতি। তার পরও সব কিছু উপেক্ষা করে বিএমএ গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী আগামীকাল ও পরদিন সারা দেশের সব চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন চিকিৎসকরা। একই সময়ে তাঁরা মানববন্ধন কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছেন। পরদিন ১৫ মে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রাইভেট চেম্বারে কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত কয়েক দিনের তিন-চারটি হাসপাতালের রোগীদের ভোগান্তি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বিএমএ’র সংবাদ সম্মেলনের কথা কালের কণ্ঠে জানায় , যে তারা যে কর্মবিরতির ঘোষনা দিয়েছে তা কোন রাজনৈতিক কারণে না। তিনি বলেন, সারা দেশে চিকিৎসকদের ওপর হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি ও ১৪ মে সারা দেশে কালোব্যাজ ধারণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা গতকাল তাঁদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এদিন বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে অনারারি চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির আশ্বাস দেওয়ার পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বোপরি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতির নামে রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ রাখা নিয়ে চলছে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড়। সাংবাদিকদের ওপর চিকিৎসকদের হামলা, সাংবাদিকদের চিকিৎসা না দেওয়ার ঘোষণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ওই সমালোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে কালের কণ্ঠ জানায়।
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.