হাতিরঝিলে আসছে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সহ আধুনিক বিনোদন সুবিধা

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৪:৩১ PM |

ওয়াইফাই, ভাসমান রেস্তোরাঁ, ওয়াটার ট্যাক্সি, লেজার শো অ্যামফি থিয়েটার, নিরাপদ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সর্বোপরি আরো আধুনিক হচ্ছে হাতিরঝিল। আসছে পুরো প্রকল্প এলাকায় বিনামূল্যে তারবিহীন ইন্টারনেট সেবা ওয়াইফাই। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ঝিলের পানিতে ভাসমান রেস্তোরাঁ এবং ওয়াটার ট্যাক্সিতে ভ্রমণের সুযোগ। সর্বসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে হাতিরঝিলে শীগ্রই নির্মিত হচ্ছে একটি থানাও।

প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে হাতিরঝিলের চারপাশে দেয়া হবে আট ফুট উঁচু প্রাচীর। আগামী মাস থেকেই এই প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হবার কথা জানিয়েছে রাজউক। দুর্ঘটনা রোধে প্রকল্প এলাকায় বসানো হবে একাধিক গতিরোধক। অধিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রাচীর ঘেরা হবে পুরো প্রকল্প এলাকা। হাতিরঝিল প্রকল্প রক্ষায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এসব উদ্যোগ নিয়েছে।
মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প শুধু রাজউকের প্রকল্প নয়, এটি দেশেরও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিজেদের প্রকল্প হিসেবেই তাদের এটা দেখতে হবে। প্রকল্পটির নান্দনিকতা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এর সুফল অব্যাহত রাখতে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে আহবান জানান মন্ত্রী।
এদিকে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য রক্ষায় বিজ্ঞাপন প্রচারের বিনিময়ে নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতা সেবা বেসরকারি কোম্পানিকে দেয়া হচ্ছে শীগ্রই। রাজউক সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে দরপত্র আহবান করা হবে এ মাসেই। এছাড়া হাতিরঝিলকে হকারমুক্ত করে অস্থায়ী ভিত্তিতে ভালোমানের খাবারের রেস্তোরাঁ বানানোর অনুমতি দেয়া হবে এবং থাকছে অ্যামফি থিয়েটার। যার মাধ্যমে লেজার শো উপভোগ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। সবকিছুই হবে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আওতায়। এ কাজে সহায়তা করবে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা।
গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের সময় হাতিরঝিলের সৌন্দর্য রাজধানীর মানুষকে বিমোহিত করেছিল। কিন্তু প্রকল্পে কাজ চলমান থাকা এবং নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য জনবল না থাকায় সৌন্দর্য এখন মলিন হয়ে গেছে। সৌন্দর্য বাড়াতে সরকার এই নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা যায়, হাতিরঝিল প্রকল্পে শুধু অবকাঠামো কাজের বরাদ্দ রয়েছে। আর কোনো খাতে টাকা বরাদ্দ নেই।
আর প্রতিবছর এই পুরো প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায় চার কোটি টাকা লাগবে। তাই রাজধানীবাসীর বিনোদন ব্যবস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু আয় করে হাতিরঝিলকে আরও সুন্দর করতে চায় সরকার। এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আরেফুর রহমান বলেন, শুধু নিরাপত্তার জন্যই প্রতি মাসে প্রায় ২৭ লাখ টাকা লাগবে। আর সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য আরও প্রায় পৌনে চার কোটি টাকা লাগবে।
তাই এসব সেবা বাড়িয়ে তা থেকে আয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে যেমন ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি কোষাগারের টাকা লাগবে না, ঠিক তেমনি মানুষের বিনোদনের অনুষঙ্গও বাড়বে। এ বছরের শেষ নাগাদ হাতিরঝিল তার নতুন রূপ পাবে বলে তিনি জানান।
বিনামূল্যে ওয়াইফাই
রাজউক সূত্র জানায়, বিনামূল্যে দিনের ২৪ ঘণ্টা ওয়াইফাই সুবিধা দিতে দুটি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ওয়াইফাইয়ের নেশায় তরুণ-তরুণীরা সারারাত সেখানে অবস্থান করবে আশঙ্কায় রাজউক অনুমতি দিতে চায় না। মোবাইল ফোনসহ ওয়াইফাই উপযোগী সব ডিভাইসেই চলবে এই সেবা। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ওয়াইফাই রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা
হাতিরঝিলের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার বেহাল দশা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। উক্ত চিঠির প্রস্তাবে হাতিরঝিল এলাকায় একটি থানা স্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নীতিগত ভাবে অনুমোদন করেছে বলে রাজউক নিশ্চিত করেছে। রাজউক নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা সেবা বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে বেসরকারি কোম্পানিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসেই দরপত্র আহবান করা হবে।
ওয়াটার ট্যাক্সি ও ভাসমান রেস্তোরাঁ
উন্নত দেশের আদলে হাতিরঝিলে চলবে দৃষ্টিনন্দন মোটর জলযান বা ওয়াটার ট্যাক্সি। টেন্ডারের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন-চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি চালানোর অনুমোদন দেয়া হবে। এগুলো দেখতে অনেকটা নৌকার মতো হবে। রামপুরা সেতু থেকে মগবাজার পর্যন্ত হরদের এপার-ওপার পর্যন্ত ভ্রমণ করা যাবে। এ ছাড়া ঝিলের পানিতে ভাসমান কয়েকটি রেস্তোরাঁর অনুমোদন দেয়া হবে। বিনোদনপ্রিয় মানুষ ও পরিবারের এ ধরনের রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার গ্রহণে আগ্রহ বেশি থাকবে বলে মনে করেন প্রকল্প পরিচালক।
হকারমুক্ত এলাকা
হাতিরঝিলে এখন ঘুরতে গেলে খাদ্য ও শিশুদের নিম্নমানের খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির অনেক ভ্রাম্যমাণ হকার দেখা যায়। রাজউকের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো হকার ও ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান থাকবে না। আবেদনের ভিত্তিতে বা দরপত্রের মাধ্যমে প্রতি বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে খাবারের দোকানের অনুমোদন দেয়া হবে, যেগুলোর নির্মাণশৈলী দৃষ্টিনন্দন ও খাদ্য স্বাস্থ্যকর হতে হবে। সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন পাওয়া যাবে।
অ্যামফি থিয়েটার
সপ্তাহে ছয়দিন সন্ধ্যায় হাতিরঝিলকে নতুন মাত্রা দেবে লেজার রশ্মির আলোকমালা প্রদর্শনীতে। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার দর্শনার্থী স্থায়ী অ্যামফি থিয়েটারে লেজার শো উপভোগ করতে পারবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের ইতিহাসকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করার ব্যবস্থা থাকবে এই অ্যামফি থিয়েটারে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্যও ভাড়া নেয়া যাবে অ্যামফি থিয়েটার।
বুয়েটের অভিমত
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড.মো. মুজিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, হাতিরঝিল উন্নয়নে প্রধান লক্ষ্যই ছিল বৃষ্টির পানিধারণ ও আশপাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। এজন্য হাতিরঝিলে ১১টি প্রবেশমুখ রাখা হয়েছে। তবে বৃষ্টির পানির সঙ্গে স্যুয়ারেজ বর্জ্যও প্রবেশ করায় হাতিরঝিলের পানির অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পান্থপথ ও মহাখালীর বক্স কালভার্ট এবং মালিবাগ, মধুবাগ ও মহানগর ড্রেনেজ লাইনের স্যুয়ারেজ বর্জ্য ডাইভার্ট করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, বালুতীরে স্থাপিত লিফট স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্জ্য টেনে নদীতে ফেলা হবে। এতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ ঘনমিটার স্যুয়ারেজ বর্জ্য বালু নদে পড়বে। বালু নদের দূষণরোধে ওয়াসাকে দ্রুত দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করতে হবে।
ঢাকা ওয়াসা
এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, এরই মধ্যে দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্ল্য¬ান্টের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নক্শা প্রণয়ন করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রাজউক চেয়ারম্যানের বক্তব্য
রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা বলেন, হাতিরঝিলকে আরও সুন্দর ও নান্দনিক করতে চলতি মাস থেকে কাজ শুরু হচ্ছে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত। অচিরেই দৃশ্যমান কিছু দেখতে পাবে নগরবাসী। নিরাপত্তার জন্য হাতিরঝিলে থানা স্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে এ মাসেই থানা স্থাপন কার্যক্রম শুরু হবে।
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.