সতেজ থাকুন গরমেও

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৯:৫৬ AM |
এখন বসন্তের মাঝামাঝি হলেও আর ক’দিন পর যে গ্রীষ্মের দাবদাহ তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। চারপাশের ভ্যাপসা গরমে ত্বকের স্বাভাবিক সতেজতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভব করতে পারেন যদি কিছু বিষয় মেনে চলতে পারেন। তীব্র গরমেও নিজেকে সতেজ রাখতে পারেন কিছু নিয়ম মেনে। এ অবস্থায় প্রচুর পানি পান করতে হবে। বাইরে বের হওয়ার আগে ব্যাগে একটি পানির বোতল নিয়ে বের হবেন। এতে ডিহাইড্রেশন থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে। ইট-কাঠের শহরে রোদ আর ভ্যাপসা গরমের অত্যাচারে বিষিয়ে উঠছে চারপাশ। আর এমন বাস্তবতায় চলতি রাস্তার ভ্যানগাড়িতে থরে থরে সাজানো কচি ডাবই হতে পারে সবচেয়ে মোহনীয় পছন্দ। গরমে ডাবের পানি আপনাকে দেবে প্রশান্তি। পাশাপাশি শরীরে সৃষ্টি হওয়া পানিশূন্যতা দূর করার জন্য এটাই হতে পারে সবচেয়ে সেরা বিকল্প। ডাবের পানি যেমন ফিরিয়ে দেবে কাজ করার শক্তি, তেমনি এর ঔষধি গুণ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাসহ বদহজম প্রতিরোধে সহায়তা করবে। এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডাব খুবই উপকারী। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ফ্লোরাইড আছে। এসব উপাদান শরীরে পানির সমতা ঠিক রাখে। পুষ্টির ব্যাপারটাও যে আপনাকে ভাবতে হবে। আর সে কারণে সকাল-দুপুর খাবার টেবিলে যুক্ত হতে পারে নানা ধরনের রসালো ফল। তরমুজ তো আছেই; সঙ্গে আনারস, আম, বাঙ্গি, পাকা বেল, আঙ্গুর ও কমলালেবু রাখতে পারেন ডাইনিং টেবিলে। তরমুজ ফালি করে কেটে ফ্রিজে রেখে খাওয়া তো অনেকের কাছে চূড়ান্ত প্রশান্তির ব্যাপার হয়ে ওঠে গরমে। ভরা পেটে খেতে পারেন আঙ্গুর। আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ থাকায় এটি নিমিষেই আপনাকে শক্তি দেবে। গরমে বিভিন্ন সময় খেতে পারেন আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, আনারস, বাঙ্গি ও পেয়ারা। এসব ফল আপনার শারীরিক দুর্বলতা দূর করার পাশাপাশি দেহের ভিটামিন ও লৌহের ঘাটতি পূরণ করবে।
ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ ও খাবার গ্রহণের সময় দুটোকেই বিবেচনা করবেন। খালি পেটে যেমন আঙ্গুর খাবেন না, তেমনি অধিক মাত্রায় আম বা কাঁঠালও খাবেন না। এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যসহ শরীরে ছোট-খাটো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ছাড়া গরমের তীব্র দাবদাহে আপনার জন্য প্রশান্তিদায়ক মেনু হতে পারে জুস ও শরবত। ঘরে ব্লেন্ডার আছে তো আর চিন্তা কী! ঘরে রাখা ফলগুলো দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন মজাদার সব জুস আর শরবত। একটু বরফকুচিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মিশেলে বাঙ্গি, তরমুজ, কাঁচা আম, কামরাঙা, আপেল, আনারস, পাকা বেল, তেঁতুল, পেঁপে প্রভৃতি দিয়ে আলাদা আলাদা বিভিন্ন রকম জুস করে নিতে পারেন। তৃপ্তিদায়ক এসব জুস যেমন আপনার পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর, তেমনি গরমেও আরাম দেবে। এসব ফলমূল ছাড়া লেবু, আখের গুড় আর ইসুবগুল তো আছেই। লেবু, ইসুবগুলের ভুসির শরবত দেহ-মনকে স্নিগ্ধ ও সতেজ রাখে।
গরমে পোশাক হতে হবে হালকা রঙের। কারণ গাঢ় রঙের পোশাক বেশি তাপ টানে। যথাসম্ভব মাংসজাতীয় খাবার এড়িয়ে শাকসবজি বেশি খেতে হবে। এগুলো আপনার শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজন মেটাতে ওস্তাদ। রান্নার জন্য বেছে নিন পেঁপে, কলা, লাউ, ডাঁটা, শসা, করলা, ঢেঁড়স, লালশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, মিষ্টিকুমড়া, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, বরবটি, পটোল, ঝিঙা, করলা, কচু প্রভৃতি তরকারি। শাকসবজির সঙ্গে দুপুরের খাবার টেবিলে যুক্ত হতে পারে টমেটো বা শসার সালাদ। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন রান্না করতে পারেন নিরামিষ। নিরামিষ রান্নার ক্ষেত্রে যাতে চার-পাঁচ রকমের সবজি থাকে, সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো আপনার পুষ্টি চাহিদা মেটাবে। আর রান্নার ক্ষেত্রে কম মসলা, কম তেলের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। পাশাপাশি সুস্থ থাকতে হলে বাইরের বানানো মসলাজাতীয় খাবার ও ভাজা-পোড়াকে অবশ্যই না বলতে হবে।
রোদ থেকে ত্বক বাঁচাতে হালকা গড়নের ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন। বাইরে থেকে এসে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছে তারপর ফ্যানের নিচে বসুন। দিনে একাধিকবার গোসল না করে, ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুছুন। প্রখর রোদ থেকে এসে মুখে এবং হাতে বরফের টুকরা ঘষুন। গরম থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারলে আপনার শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনটাও প্রফুল্ল থাকবে। যেহেতু ঘরের ছোট এবং বয়স্করা নিজে নিজে এগুলো মেনে চলতে পারে না, তাই তাদের এক্ষেত্রে সাহায্য করুন। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে গরমেও ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তবে এ সময়ে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে অনেকেই ব্যায়াম করতে ভয় পান।
এ সময়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়ামের ফলে শরীর থেকে অনেক পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। ফলে দেখা দিতে পারে দুর্বলতা, পেশিতে খিঁচুনি ধরা, পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা এবং উচ্চ হৃত্স্পন্দন। দেখা যেতে পারে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। তাই বেশি ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার আগেই ব্যায়াম সেরে ফেলুন। তাপমাত্রা অসহনীয় মনে হলে বাসার ভেতরে বা জিমের ভেতরে ঠাণ্ডা পরিবেশে ব্যায়াম করুন। যে সময়েই হাঁটতে বা দৌড়াতে বের হন না কেন, সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। তেলবিহীন হলে ভালো, কারণ তাহলে বেশি গরম লাগবে না। ব্যায়াম শুরুর আগে শরীরের পানির প্রয়োজন মিটিয়ে নিন। সঙ্গে রাখুন ঠাণ্ডা পানি এবং কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করুন। এক ঘণ্টার বেশি ব্যায়াম করলে পানিতে স্যালাইন মিশিয়ে নিন। সকাল এবং সন্ধ্যাবেলায় গরম, আর্দ্রতা এবং বাতাসের দূষণ সবচেয়ে কম থাকে। এসব সময়েই ব্যায়াম সেরে নেওয়া ভালো।
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.