কিছুতেই কমছে না মোবাইল ইন্টারনেটের দাম! ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে কি লাভ হল???

মোঃ আব্দুল মাজেদ সরকার | ৭:১৩ PM |





১৯৯৬ সাল। বাংলাদেশ প্রথম ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের জন্য ব্যয় হতো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু সে সময় সরকারিভাবে বিটিসিএল কোনো ব্যান্ডউইথড বিক্রি করত না।
এ মুহূর্তে বিটিসিএল এবং ম্যাঙ্গো যৌথভাবে দেশে ব্যান্ডউইথড বিক্রি করছে। তবে দফায় দফায় ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও প্রান্তিক ভোক্তাদের কাছে এর সুফল অধরাই রয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে মোবাইল অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবাদাতারা অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগের কথা সামনে তুলে ধরছেন।

দেশের মোবাইল অপারেটরদের অনেকেই বলছেন, এ ব্যয় কমে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বাজারে বহুমুখী প্রতিযোগিতায় এখনও ইন্টারনেট সেবাদাতারা প্রত্যাশিত মুনাফা থেকে অনেক দূরে। আর সে কারণেই ইন্টারনেট ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকারকেই আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে এ খাতে ভর্তূকি দেওয়ার কথাও চিন্তা করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, দেশে ২০০৪ সালে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। তখন প্রতি মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ব্যান্ডউইথের দাম ৭২ হাজার টাকা ছিল। এর ৮ বছর পরে এসে দাম হয়েছে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু দাম কমানোর বিপরীত চিত্রে কমেনি মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাব্যয়।
ইন্টারনেটের দাম সাশ্রয়ী করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নির্দেশনা জারির প্রক্রিয়া শুরু করলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস জানান, ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হলেও মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবামূল্য সে অনুযায়ী কমেনি। এ বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হবে। নির্দেশনা জারির প্রক্রিয়াও থেমে আছে। এটার জটিলতাও অনুসন্ধানের দাবি রাখে।
২০০৪ সালে গ্রামীণফোন ‘পি১’ প্যাকেজের মাধ্যমে মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা শুরু করে। এ মুহূর্তে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অপারেটরের বেশ কিছু প্যাকেজ চালু করেছে। তবে এসব প্যাকেজের জটিল সব সমীকরণের পেছনের গ্রাহক হয়রানির অন্তহীন অভিযোগ রয়েছে।
গ্রামীণফোনের একজন গ্রাহক ‘পি১ প্যাকেজে’ যতটুকু ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করেন, তাকে সে পরিমাণ বিল পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ এটি গ্রাহকের ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। শুরুতে পি১ প্যাকেজে প্রতি কিলোবাইট ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহককে ব্যয় করতে হতো ২ পয়সা।
২০০৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ব্যান্ডউইথের দাম কমে যথাক্রমে ১৮ হাজার, ২০০৯ সালে ১২ হাজার, ২০১১ সালে ১০ হাজার এবং সর্বশেষ ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিগত আট বছরে পাঁচ দফায় ব্যান্ডউইথের মূল্য ৬৪ হাজার টাকা কমানো হলেও পি১ প্যাকেজে গ্রাহককে এখনও কিলোবাইট প্রতি সেই ২ পয়সা করেই দিতে হচ্ছে।
এ মুহূর্তে মোবাইল ইন্টারনেটে গ্রামীণফোন ১৫ এমবি ৩৩ টাকা এবং রবি ২০ এমবিতে ২৩ টাকা চার্জ করছে। ফলে দেশের সাধারণ ইন্টারনেট ভোক্তাদের কাছে ব্যান্ডউইথের দাম কমে আসার সুফল উপভোগ্য হচ্ছে না।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অব বাংলাদেশের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচালক সুমন আহমেদ সাবির  বলেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমানোর সঙ্গে ভোক্তাদের সেবাব্যয়ও কমিয়ে আনা হচ্ছে। তবে মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে হিসাবটা একেবারেই ভিন্ন।
দেশের এখন ইন্টারনেটভিত্তিক কনটেন্টের (অডিও, ভিডিও, লাইভ খবর-মিডিয়া) ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু ইন্টারনেট মোবাইলমুখী হওয়ায় তা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।
এক্ষেত্রে বর্তমান দামের প্রেক্ষাপটে ১ হাজার টাকায় ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের দাম ৭০০ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক ইন্টারনেট গতির প্রশ্নে অভিযোগ আছে, এটা সত্য।
দেশে ইন্টারনেটের সেবাব্যয় কমিয়ে আনলে কি ধরনের ব্যবসার সুযোগ তৈরি হবে এমন প্রশ্নে বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শামীম আহসান বলেন, দেশের ৫০ হাজার মানুষ এখন আউটসোর্সিং নির্ভরশীল। এ খাতে বাংলাদেশের বার্ষিক আয় এখন ৩ কোটি ডলার। সুতরাং, ইন্টারনেটের ব্যয় কমিয়ে আনলে এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা পেতেন।
তিনি আরও বলেন, এর ফলে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে লাখেরও বেশি আউটসোর্স কর্মী তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এ খাতের আয় তখন ১৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই দেশের আইসিটি শিল্পের দ্রুত বিকাশ এবং দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল ইন্টারনেটের সেবাব্যয় সাশ্রয়ী, সেবাবান্ধব এবং সহজলভ্য করতে হবে। বিপরীতে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ ছাড়াও দেশে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবাদাতা কিউবি এবং বাংলালায়ন এখনও গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। ঢাকা শহরেই বিভিন্ন স্থানে এখনও ইন্টারনেট সেবায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন ওয়াইম্যাক্স গ্রাহকেরা। সুষ্ঠু নেটওয়ার্ক বিন্যাস ছাড়াই গ্রাহক বৃদ্ধির কারণে এ সমস্যা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত দিয়েছেন।
আরও একবার ব্যান্ডউইথের দাম কমে আসায় দেশের ইন্টারনেট গ্রাহকদের মধ্যে এখন নতুন উদ্দীপনা এসেছে। তবে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবাদাতাদের বিক্রয়োত্তর সেবার ওপরই নির্ভর করবে এ সুফল কতোটা ভোক্তাদের অনুকূলে যাচ্ছে।
 
ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে কি লাভ হল??? 

১ মে ২০১৩ তারিখ থেকে ব্যান্ডউইথের এর দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৮,০০০ টাকার ব্যান্ডউইথের এর বর্তমান দাম ৪,৮০০ টাকা।
এবার দেখুন ৪,৮০০ টাকার ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট প্রভাইডাররা কত টাকায় বিক্রি করছেঃ
2G
ইন্টারনেট প্রভাইডার
কিনে
বিক্রি করে
গ্রামীণফোন
৪,৮০০ টাকায়
৪৩,৩৫০ – ৬০,০০০ টাকায়
বাংলালিংক
৪,৮০০ টাকায়
৩৩,২৮০ – ৪০,০০০ টাকায়
রবি
৪,৮০০ টাকায়
৩৮,২৫০ – ৫০,০০০ টাকায়
এয়ারটেল
৪,৮০০ টাকায়
৩৮,০৯৭ – ৪৫,০০০ টাকায়
টেলিটক
৪,৮০০ টাকায়
৩০,৬০০ – ৪০,০০০ টাকায়
3G
ইন্টারনেট প্রভাইডার
কিনে
বিক্রি করে
টেলিটক
৪,৮০০ টাকায়
২৪,০০০ – ২৮,০০০ টাকায়
4G
ইন্টারনেট প্রভাইডার
কিনে
বিক্রি করে
বাংলালায়ন
৪,৮০০ টাকায়
২০,০০০ – ২৩,০০০ টাকায়
কিউবি
৪,৮০০ টাকায়
২২,০০০ – ২৫,০০০ টাকায়
এখন আপনারাই বলেন ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও বাংলালায়ন, কিউবি, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল, টেলিটক এরাতো দাম কমালো না।
অথচ দেখবেন ৪,৮০০ টাকার ব্যান্ডউইথের এর দাম আবার ৮,০০০ টাকা হলে দাম বাড়াইতে ১ সেকেন্ড লাগবে না।
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

অনুসন্ধান

Blogger দ্বারা পরিচালিত.